সময় অমূল্য সম্পদ। নদীর স্রোতের ন্যায় সময় ধেয়ে চলে যাই।সময়ের যে অংশটুকু পিছনে চলে গেল সে কি আর ফিরে আসে? কখনো ফিরে আসে না। এটাই সময়ের বিশেষ ধর্ম। এমন অনেক জিনিস আছে যা ধন সম্পদের বিনিময়ে, শ্রম ও সাধনার বিনিময়ে অথবা অন্য কোনো উপায় ফিরে আনা যায়। কিন্তু একবার হারিয়ে গেলে রাশি রাশি ধন অথবা সাধনা দিয়েও পাওয়া যাবে না। আমাদের এ জীবন স্রষ্টার সর্বোত্তম দান। আমরা ভালবাসি আমাদের জীবনকে। তাই এই পৃথিবীতে রেখে যেতে চাই জীবনের স্বাক্ষর। এজন্য যে প্রচেষ্টা এবং তার ধারণা আবশ্যক তার মধ্যে সময়কে কাজে লাগানোর শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
জ্ঞানী যারা, তারা সময়ের প্রান্তর থেকে প্রতিমুহূর্তে কুড়িয়ে নেন অজস্র মুনিমুক্তা, সমৃদ্ধ করে তোলে নিজেদের অপার ঐশ্বর্য। সময় থাকতেই জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী কাজের পরিকল্পনা করতে হয়, অনুসরণ করতে হয়। তাহলে সে মানুষটি একদিন সুন্দর সকালে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে যে, সে তার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে।এখন যা করা দরকার, এখন করতে হবে। এটাই মনীষী বাক্য। ফ্রাঙ্কলিনের মতে, ” যা তুমি আজ করতে পারো তা কখনো কালকের জন্য ফেলে রাখবে না।” আল্যপরায়ণের সময় ব্যর্থ আর কর্ম দক্ষ ব্যক্তির সময় সার্থক হয়। আমরা সবাই বলি সময় চলে যায়। বিষয়টি গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সময় যায় না, আমরা যাই। যেমন চলমান ট্রেন। প্রকৃতি যায় না, ট্রেনটি যাই। জীবনের সময় থেকে আমাদের এই ধাবমান গতি। গতির স্রোত হারিয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই জীবন সাধনার ফসল কে মাইলস্টোন হিসেবে রেখে যেতে হয় এবং এর জন্য চায় সময়ের সদ্ব্যবহার। মানব জীবন সুদীর্ঘ নয়। দীর্ঘতা দিয়ে জীবনের বিচারও হয় না। জীবনের বিচার তার সাফল্যের মাপকাঠিতে। হাজার বছরের নিষ্ফল জীবনের চেয়ে স্বল্পকালীন সোনালী ফসলের জীবন অতি উত্তম। শিশুকাল থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত একটি রুটিন আছে। প্রতিটি সময়সীমার মধ্যে প্রতিটি কাজ শেষ করতে না পারলে তা জড়ো হয়ে যাবে, জীবনে বিশৃঙ্খলা আসবে, তখন তরি বেয়ে নামা কঠিন। মাঝ দরিয়ায় হাল ভেঙেছে মাঝি তখনই বলে ‘সময় হলো না।’ একি সময়ের দোষ? নিশ্চয় না। সময় থাকতে সময়ের মূল্য দেওয়া হয়নি বলেই তো এই দুর্দশা। জীবনের অনেক কাজ বাকি রেখে তাকে বিদায় নিতে হয়।
সময়ের মূল্য সম্পর্কে নিজেকে অবহিত করার এবং রুটিন অনুযায়ী প্রতিটি কাজে অভ্যস্ত হওয়ার প্রকৃষ্ট সময় ছাত্র জীবন। খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা, কাজকর্ম, খেলাধুলা, বিশ্রাম সবকিছুই নির্দিষ্ট সময় সম্পন্ন করা আবশ্যক। নিজের আদর্শ ও অভিরুচি অনুযায়ী জীবনের লক্ষ্য সাধনে প্রতিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পার হওয়া উচিত। ব্যক্তিগত এবং জাতীয় জীবনে মঙ্গলজনক কাজ করতে হলে সময়কে কাজে লাগাতেই হবে। কারণ, অমূল্য সময় অপচয় করে সফলতার আশা করা বৃথা প্রয়াস মাত্র। সময় বসে থাকে না। নদীর স্রোতের মতো চলে যায় অথবা আমরা এগিয়ে যাই। সময়ের ধর্মকে অনুধাবন করে আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে হবে। কোথাও ব্যর্থ হলে জীবন পিছিয়ে যায়। সামনে এগিয়ে যায় বুদ্ধিমানের দল।
প্রতিভাবান তারাই, কর্ম তৎপর তারাই, যারা দক্ষতা দিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে জ্ঞানের মশাল হাতে জীবনের চিহ্ন রেখে যান। এ ধুলার ধরণী তাদেরই জয়গান করে। উত্তরসুরিরা খুঁজে পাই চলার পথ। একমাত্র সময়ের মূল্য দিয়ে নশ্বর জীবন হয়ে ওঠে অবিনশ্বর। ক্ষুদ্র মানব জীবন তখন আর ক্ষুদ্র বলে প্রতিপন্ন হয় না, মহিমান্বিত হয়ে ওঠে।সময়ের এই অস্থির ধাবমানতার জন্যেই জীবন মানুষের কাছে পরম মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন সীমাবদ্ধ। তাই সময়ানুবর্তী হওয়া প্রত্যেকের অবশ্যই কর্তব্য। যাতে জীবন আবাসনের মুহূর্তে সময়ের মূল্য বুঝিনি বলে দুঃখ করতে না হয়।