শীতকাল রচনা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ। ঋতুতে ঋতুতে সাজ পরিবর্তন করে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। বাংলাদেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত শীত ও বসন্ত এই ছয়টি ঋতু বিরাজমান। হেমন্তের পরে আসে শীতকাল। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাসকে শীতকাল বলা হয়। তবে মাঝে মাঝে হেমন্তকাল থেকে আরম্ভ করে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে শীতকাল স্থায়ী হয়ে থাকে। আর আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে শীতকাল সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই আপনারা যারা শীতকাল রচনাটি সম্পর্কে সুন্দর ধারণা লাভ করতে চান, আবার এই রচনাটি লিখে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চান, তারা আমাদের আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন অথবা এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি এখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যটি খুব সহজে পেয়ে যাবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।

শীতকাল বাংলাদেশের ছটি ঋতুর অন্যতম একটি। শরতের ফুরফুরে দিন এবং হেমন্তর সোনালী দিনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে শীত তার প্রচন্ডতা নিয়ে। হেমন্তের সোনালী ধান গোলায় উঠে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে নামে শীতের কুয়াশা। হিমের হাওয়ায় হাড় কাঁপুনে শীত। উত্তরে হাওয়া পাহাড়ি এলাকা থেকে বরফের চাদর নিয়ে যেন এসে গ্রাস করে সারা বাংলাদেশ। দিন না যেতেই রাত্রি হয়। জীবনের চঞ্চলতা থেমে যায়। হৃদয়ের পরতে পরতে সুরের তরঙ্গ ঝিম ধরে আসে। গাছপালা কঠোর শীতে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। গায়ে যেন উত্তাপি আসে না। অনেক সময় দরজা- জানালা বন্ধ করে এমনকি দিনের বেলাতেও আশ্রয় নিতে হয় ঘরে। বেশ বেলা পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাওয়া যায় না। সূর্য ডোবার অনেক আগেই মনে হয় ডুবে গেছে।

সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দিগন্ত জুড়ে কুয়াশা নামে। চারিদিকে ঝাপসা হয়ে যায়। সকালেও অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। রোদ উঠি উঠি করেও যেন উঠতে চাই না। মনে হয় বহু কষ্টে কুয়াশা ভেদ করে সূর্যটা গাছের ফাঁকে উঁকি দিতে চেষ্টা করে। সেই রোদ নিয়ে আমাদের কাড়াকাড়ি। অনেকে বাড়ির বাইরে মুক্তাঙ্গনে রোদেলা জায়গায় আসন গেটে বসে যায়। সকালের নাস্তা প্রায় বাড়িতে রোদে বসে শেষ করা হয়।

শীতের সকাল এমন একটি সময়, যখন জীবনের কোন চমক থাকে না। উঠি উঠি করে বিছানা ছেড়ে উঠা যায় না। ওদিকে মোরগ ডাকে, কাক ডাকে। ঠান্ডা বাতাস বেশ ভেদ করে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি। আস্তে আস্তে কর্মব্যস্ত মানুষের উঠা শুরু হয়। পানি না যেন বরফ। এ সময় গরম পানি খুবই আরামদায়ক। প্রকৃতি যেন এক রহস্য ঢাকা। আচ্ছন্ন গাছপালা একটা বিরাট শূন্যতা বিরাজ করে। পথঘাট কোলাহলমুক্ত। বিচিত্র ধরনের গরম পোশাক পরে মানুষ চলাচল শুরু করে। কারো গায়ে বিছানার চাদর, কারো কম্বল, কারো গায়ে আবার কাঁথা কেউবা বড় আকারের পুরনো কোট গায়ে জড়ায়, মাথায় লাগায় গরম টুপি। সৌখিন ও বিত্তবান লোকেরা বিভিন্ন রকম ফ্যাশনের কাপড় পড়ে এবং সকালে ভ্রমণে বেরিয়ে যায়।

শীতের সকালে কোথাও ধুলোবালি থাকে না। মাঝে মাঝে ঝড়া পাতার স্তুপ দেখা যায়। ফুটপাতে যারা থাকে, বস্তিতে যারা বাস করে, তাদের শীতের রাত কেমন করে কাঁটে, সকাল কেমন করে আসে এবং যাই ভাবতে কষ্ট হয়। তবু তাদের জীবন চলে। তারাও কাঁথা, কম্বল গায়ে দিয়ে জীবিকার অন্বেষণে বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশের গারো পাহাড়, ভাওয়ালের গড় এবং দিনাজপুর ও রংপুরে তুলনামূলকভাবে শীত বেশি পড়ে। সমুদ্রের কাছাকাছি জায়গায় বায়ুতে কিছু জলীয় বাষ্প থাকে বলে সেখানে শীতের প্রকোপ কম। মাঘের শেষে মনে হয় বসন্ত আসে। দেখতে দেখতে শীত একদিন চলে যায়। বাংলার প্রকৃতিতে তখন ফাল্গুন আসে। এভাবেই শীতকাল বাংলার প্রকৃতি থেকে আস্তে আস্তে বিদায় নেয়।