আজকের শিশুই আগামীর ভবিষ্যৎ বা শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতে তারাই জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। এ পৃথিবীর সকল মানুষের এক বাক্যে স্বীকার করেন যে শিশুরাই দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আজকের শিশুরাই আগামী বিশ্বের নাগরিক। আমরা যখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথা বলি, তখন এই প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য কি ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করছি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কেননা এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কোন রকম টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিশুদের মৌলিক অধিকারসহ অসংখ্য অধিকারের কথা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত।
এ বিশ্ব আজ শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রতিদিনই সুন্দর পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ শিশু বিভিন্ন রোগে মারা যায়। কোটি কোটি শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয় অনেকেই আর জীবন যাপন করে রাজপথে। বিশ্বব্যাপী শিশুদের পুষ্টিহীনতা, অশিক্ষা ও নিরাপত্তাহীনতা দূর করতে অর্থের প্রয়োজন। অথচ প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে তথাকথিত প্রতিরক্ষা খাতে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কোটি কোটি শিশু মানবেতর জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশ শিশুদের সার্বিক উন্নয়নে আইন কানুন ও নীতি প্রণয়নে দক্ষিণ এশিয়ায় অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে।
আমাদের শিশু নীতি, শিশু আইন, শিশুশ্রম নিদর্শন নীতি, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, নারী ও শিশুশ্রম দমণ আইন, পাচার প্রতিরোধসহ নানা বিষয় শিশুদের সুরক্ষামূলক আইন রয়েছে, যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। তবে একই সঙ্গে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শিশু সুরক্ষা বিষয়ক চেতনাগত পরিবর্তন দরকার। পরিবার ও স্কুল গুলো এখনো শাসনের নামে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতনের প্রচলন রয়েছে। যা শিশুর বিকাশে বড় অন্তরায়। এসব বন্ধ করতে দরকার সামাজিক সচেতনতা। যেখানে সংবাদমাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংগঠনগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
তাছাড়া ও বর্তমান সমাজে শিশুদের নানা রকম অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন রকম শিশু শ্রমে নিয়োজিত করা হচ্ছে। শিশুকাল অতিক্রমের আগে অর্থের বিনিময়ে বা বিনা বেতনে কেউ কায়িক শ্রমের কাজে নিয়োজিত হলে তাকে শিশুশ্রম বলে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এ ধরনের শ্রমকে শোষণ বলে বিবেচনা করেছে। বহু দেশে এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং আমাদের দেশের শিশুশ্রমকে নিরুৎসারিত করা হয়েছে। শিশু শ্রমকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে ১২ই জুন বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হচ্ছে।
মূলত অসচ্ছল দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা শিশু শ্রমের সাথে নিয়োজিত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে গ্রেট ব্রিটেনের সর্বপ্রথম শিশুশ্রম সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০০৬ সালে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আঠারো বছরের কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করার বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও থেমে নাই শিশুশ্রম।
লেখাপড়ার খরচ না দিতে পারা, সংসারের অসচ্ছলতা পিতা মাতাকে বাধ্য করে সন্তানকে শ্রমে নিযুক্ত করতে। শিশুশ্রম শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। একটি দেশের গুণগত অর্থে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে সকল বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়, তার মধ্যে শিশুশ্রম কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কেননা আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের মাঝে থাকে সুপ্ত সম্ভাবনা। আর এভাবে যদি শিশুদের বিভিন্ন শ্রমে নিযুক্ত করা হয়, তাদের অধিকার থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়, তাহলে তাদের সেই সুপ্ত সম্ভাবনা কখনোই বিকশিত করা সম্ভব হবে না।
আমরা একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে বেশিরভাগ শিশুরাই তাদের মৌলিক অধিকারগুলো থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করা দরকার এবং শিশুদের বিভিন্ন অধিকার প্রদানে সবাইকে এগিয়ে আসার দরকার। কেননা শিশুদের যদি এখনই তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তারা ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ থেকেই বঞ্চিত হবে। এই বিষয়গুলো শিশু অধিকার অনুচ্ছেদটিতে লিখতে পারলে খুব ভালো নম্বর অর্জন করা যাবে বলে আশা করছি।