মাদক গ্রহনের কুফল রচনা

বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগেএসে মাদকাসক্তির মরণ ছোবলে মানব সভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন। উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত সকল প্রকার রাষ্ট্রেই মাদকদ্রব্য সেবন এবং এর কুফল এক বিশাল অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কেননা মাদকদ্রব্যের নেশায় অভ্যস্ত হয়ে মানুষ চরম অধঃপতনে গমন করে। এতে ব্যক্তিগত জীবনে যেমন হতাশা নেমে আসে, তেমনি সমাজ এবং জাতীয় জীবনেও ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। আর এ সকল বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। তবে আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত মাদক গ্রহণের কুফল এই রচনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি মাদক গ্রহণের কুফল রচনাটি সম্পর্কে যারা বিভিন্ন বিষয় জানতে চান, আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য অনেক উপকারী হবে। তাই আপনারা যারা এই রচনাটি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভ করতে চান তারা আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সুন্দরভাবে পড়তে পারেন।

দুই ধরনের মাদকদ্রব্য আমাদের দেশে আগেও প্রচলিত ছিল, এখনো রয়েছে। একপ্রকার সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। অপরপ্রকার গ্রহণযোগ্য নয়। তামাক বা বিড়ি, সিগারেটের মত মাদকদ্রব্য সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য মাদক। এগুলো অধিকতর মৃত্যু ও অসুস্থতার জন্য দায়ী হলেও সমাজের লোক এগুলোকে খুব বেশি খারাপ মনে করে না। তবে এগুলোর প্রতিও মানুষ আসক্ত হয়। গাঁজা, আফিং, ভাং, হেরোইন, কোকেন, আসিস, মারিজুয়ানা, ব্রাউন সুগার ইত্যাদি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলো যারা ব্যবহার করে সমাজ তাদের ভালো চোখে দেখে না। এই ধরনের মাদকদ্রব্য খুব দ্রুত মানব দেহে ও মনে প্রভাব ফেলে। তাই এগুলো গ্রহণকারীদের সমাজ ভালো চোখে দেখে না।

যারা মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে এক বা একাধিক মাদকদ্রব্য। তারা মাদকাসক্তি বর্জনে অক্ষম। এর মাদকদ্রব্যের জন্য নিজ ধন-সম্পদ সব ত্যাগ করতে প্রস্তুত। ধন সম্পদ শেষ হলে চুরি, প্রতারণা, রাহাজানিসহ অন্যান্য অপরাধ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। মাদক দ্রব্য ব্যবহার হঠাৎ বন্ধ করলে উইথডুম সিম্পটম দেখা দেয়। এটা আরেক ধরনের কষ্ট। যারা মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে, তারা প্রথম দিকে কিছুটা প্রীতি বোধ করলেও শেষের দিকে মাদকদ্রব্য গ্রহণের জন্য যে কষ্ট হয় তা থেকে মুক্তি পেতে মাদকদ্রব্যের অধিক আসক্ত হয়ে পড়ে। এ ধরনের আসক্তির হাত থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।

আজকাল আমাদের দেশে হেরোইন নামক বিষাক্ত মাদকদ্রব্য অধিক ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু কথা হল এই প্রাণনাশকারী হেরোইন আমাদের নিকট এত সহজলভ্য হলো কি করে? হতাশা বেকারত্ব তো আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু অতিতে তো আমাদের খুব কম লোকই নামটা জানতো। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর পিছনে রয়েছে কতগুলো অসৎ অর্থলোভী ব্যক্তি। তারা বিদেশ থেকে চোরাচালান করে এদেশে এই হেরোইন এনে আমাদের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে। এদের চিহ্নিত করে নির্মূল করতে পারলে যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে।

মাদকদ্রব্য গ্রহণে দেহ ও মন উভয়ে বিপর্যস্ত হয়। মানসিক ভারসাম্য হারাতে হয়। এতে চাকুরীজীবী ব্যক্তির চাকরি হারিয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রী লেখাপড়া ছাড়ে। চুরি ডাকাতি ছিন্তায়, রাহাজানি প্রভৃতি সামাজিক অপরাধে লিপ্ত হয়। জেলে যায়। সামাজিকভাবে নিন্দিত এবং ঘৃণিত হয়। স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে দূরে সরে যায়। এদের চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে অকালে মারা যায়।

আমাদের দেশের ক্রম অবনতিশীল এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য সচেতনতা আবশ্যক। আমাদের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি স্থানে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এই সম্বন্ধে আলোচনা করে মাদকাসক্তির পরিণাম সম্বন্ধে যদি অবগত করেন, তবে ধীরে ধীরে আমাদের তরুণসমাজ মাদকাসক্তি থেকে বিরত হতে পারে। এছাড়া হেরোইন, কোকেন, গাজা, মদ, ভাং প্রকৃতি মাদক দ্রব্য যাতে সহজলভ্য না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সরকারকে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাই যদি এ সম্বন্ধে সচেতন হয়, তবে হয়তো মাদকদ্রব্যের ব্যবহার হ্রাস পাবে। আমরা আশা করব মাদকদ্রব্য ঘৃণিত হোক। আমাদের যুব সমাজ সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করুক।