ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তারপর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে গড়ে তোলার সংগ্রাম শুরু। স্বাধীনতার অনেক বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও আমরা উন্নয়নশীলতার গণ্ডি থেকে বের হতে পারিনি। আসেনি আশানুরূপ অগ্রগতি। এর পিছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে আমাদের আলস্য, নৈতিকতার অভাব, কাজের চেয়ে বেশি কথা বলার প্রবণতা এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অগ্রসর না হওয়া ইত্যাদি। ফলে আমাদের সবকিছুই হচ্ছে মন্তর গতিতে। এই মন্থরতা কাটিয়ে দেশের কর্মকান্ডে গতিশীলতা সৃষ্টিতে ডিজিটাল পদ্ধতির কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ডিজিটাল পদ্ধতি বাংলাদেশের সকল কর্মকান্ডের সাথে ক্রমান্বয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার সংযুক্ত হলেই গড়ে উঠবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০২০ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা সংক্ষেপে যা বুঝতে পারি তা হল সারা দেশের কর্মকান্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে গতিশীল করে তোলা। সরকারি অফিস- আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়, রাজপথ ও হাইওয়ে রোডগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে কম্পিউটারের ইন্টারনেট সিস্টেমে এক জায়গায় বসে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ড এবং বহির্বিশ্বকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হবে, তাকেই আমরা বলতে পারি ডিজিটাল বাংলাদেশ। ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে প্রথমে শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তব্য ভিডিও করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেওয়ালে সাদা পর্দায় তা পদর্শন করা যায়। এটি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের সহজ পদ্ধতি। কোন শিক্ষকের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেও এ পদ্ধতিতে সহজে কাজ সম্পন্ন হতে পারে। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এই পদ্ধতিতে ঘরে বসেও শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। নিজস্ব বই না থাকলেও লাইব্রেরীতে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে নিয়ে তা পড়ে ফেলা যায়। এভাবে ডিজিটাল পদ্ধতি শিক্ষা ক্ষেত্রে উৎকর্ষ বয়ে আনতে পারে। তবে একে সার্বজনীন করার জন্য ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

এভাবে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিজিটাল প্রযুক্তির উন্মোচন ঘটানো প্রয়োজন। যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে, কৃষি ক্ষেত্রে, অফিস-আদালতের ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বিধানে, ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে, যোগাযোগের ক্ষেত্রে, প্রকাশনার ক্ষেত্রে, সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে, বিনোদনের ক্ষেত্রে, এমনকি ব্যাংক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। তাহলে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে এবং উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ও সহজ হবে।

বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি তথ্য সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব অনলাইন তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে। এসব তথ্য কেন্দ্র থেকে মানুষ বিভিন্ন ডাটা বা তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। জানতে পারবে সর্বশেষ প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা ও অবস্থান। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন প্রতিটি উপজেলায় সার্ভার স্টেশন উদ্যোগ নিয়েছে। এই সার্ভার স্টেশন চালু হলে ভোটাররা তাদের নিজ উপজেলায় বসে নতুন ভোটার হওয়া, ভুল সংশোধন, পরিবর্তন সহ যাবতীয় তথ্য আপডেট করতে পারবে। অন্যান্য সেক্টরেও এ ধরনের সার্ভার স্টেশন চালু হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে ওঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। দেশটিকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হলে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আর উন্নয়ন ঘটাতে হলে কাজের কোন বিকল্প নেই। কাজের মধ্য দিয়েই ভালবাসতে হবে দেশকে। প্রশাসনকে গড়ে তুলতে হবে কার্যকর ও গতিশীল। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর উন্নয়নশীল থেকে উন্নতির দিকে ধাবিত হবে এই দেশ। তাই সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পেছনে পরিশ্রম করতে হবে।