স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রচনা

আমাদের বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আর কোন কিছুর পঞ্চাশ বছর পূর্তি হলে তাকে সুবর্ণজয়ন্তী বলে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করার পর ২০২১ সালে সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। আর এজন্য ২০২১ সালকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর বলা হচ্ছে। ২০২১ সালে স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে নানা ধরনের উৎসব আয়োজন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। বাঙালি জাতি অনেক আনন্দের সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে। আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত এই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এখান থেকে যে কেউ এই রচনাটি সম্পর্কে খুব সহজভাবে নানা রকমের তথ্য পেয়ে যাবেন।

বাঙালি জাতি আজ স্বাধীন। বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের নিজস্ব একটি ভূখণ্ড, নিজস্ব একটি পতাকা রয়েছে। কিন্তু এই স্বাধীনতার পিছনে অনেক করুন ইতিহাস রয়েছে। এই দেশ অসংখ্য ত্যাগ- তিতিক্ষা আর নানা রকমের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা পায়। পাকিস্তানের দুটি অংশ হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অংশ। পূর্ব পাকিস্তান ব্রিটিশদের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। মূলত ব্রিটিশদের মতোই পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানীদের নানা রকম শোষণ করত, শাসন করতো। কিন্তু বাঙালি জাতি হল প্রতিবাদী জাতি। তারা কোনভাবে অন্যের শাসন, শোষণ মেনে নিবে না। এজন্য তারা প্রতিবাদী হতে থাকে। আর পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে।

বাঙ্গালীদের নির্যাতনের অংশ হিসেবে পাকিস্তানি গোষ্ঠীরা প্রথম আঘাত হানে তাদের ভাষার উপর। তারা চায় পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষার উর্দু করতে। কিন্তু বাঙালি জাতি তাদের এই অন্যায় দাবি মেনে নেয়নি। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য নানা রকম সংগ্রাম করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাঙালি জাতি তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির কথা স্মরণ রেখে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটা বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের কাছে খুবই গর্বের বিষয়।

তারপর আস্তে আস্তে সময় চলে যায়। আর পশ্চিম পাকিস্তানীরা নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে যায়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানিরা তাদের সকল নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাই। এভাবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালি জাতির প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনে জয়লাভ করলেও তার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। এর ফলে বাঙালি আরো বেশি প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর-রহমান ৭ মার্চে যে দিক নির্দেশনামূলক ভাষণ দেন, সেই ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতি আরও উদ্যমী হয় মুক্তিযুদ্ধের জন্য। তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাসের সংগ্রামের পর প্রায় ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

সেই স্বাধীনতার করুন ইতিহাস বাঙালি জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। তাইতো প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি বিজয় দিবস পালন করে। আর এই দিনটি নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে এবং তাদের আত্মার শান্তির জন্য কামনা করে। আর সেই স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২১ সাল কে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী হিসেবে ধরা হয়েছে। এই সুবর্ণ জয়ন্তী বাঙালি নানা উদ্দীপনা, পরিকল্পনার মাধ্যমে পালন করছে। এই দিনটাতে এসে আমাদের অন্যতম প্রধান প্রত্যাশা হচ্ছে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা। আর তাই উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি করার জন্য আমাদের একযোগে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এজন্য সবাইকে মিলে মিশে কাজ করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে।