যৌতুক প্রথা একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি। বাংলাদেশের যৌতুক প্রথার প্রকট রূপ আমাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছে। পণপ্রথা বা যৌতুক প্রথা বলতে এমন এক ঘৃণ্য প্রথা কে বুঝায়, যেখানে কনেপক্ষ বরপক্ষকে অর্থ প্রদান করে কন্যার বিয়ের ব্যবস্থা করে। পন্য ক্রয় করার মতোই কন্যা পক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দরকষাকষি হয়ে থাকে। সচ্ছল পরিবারের জন্য এটি সাধারণ বিষয় হলেও দরিদ্র পরিবারের জন্য তা নিদারুণ কষ্টের ও বিড়ম্বনার।
পণপ্রথা বা যৌতুক প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত। তবে আগেকার দিনে এই প্রথার রূপ অন্যরকম ছিল। আগের দিনে বরপক্ষ কন্যাকে নানা রকম অলংকারে সজ্জিত করার পাশাপাশি কন্যার পিতাকে নগদ অর্থ প্রদান করত। কিন্তু কালক্রমে সেই রীতিরই উল্টো করে ঘটেছে। ফলে বর্তমানে কন্যা পক্ষকে যৌতুক বা পন দিতে হয়। যৌতুকের অভাবে অসংখ্য নারীর জীবন আজ হুমকির মুখোমুখি। অনেক সময় যৌতুক প্রদানে ব্যর্থ হলে নারীকে এর জন্য অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার যৌতুকবিরোধী আইন করলেও তা মানছে না অনেকেই। ফলে যৌতুকের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য নারীর জীবন। তাই যৌতুক প্রথা রোধ করার জন্য প্রথমত নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে নারীকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা। আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ বা যৌথ প্রথা রোধ করা সম্ভব।
অনেক পরিবার দেখা যায় যে যৌতুক না দিতে পেরে বা যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে না পারার কারণে মানসিক বিভিন্ন কষ্টে ভোগেন। আবার নারীদেরকেও নানা ধরনের নির্যাতন করা হয় যৌতুকের টাকা আদায় করার জন্য। বাংলাদেশের এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে যে যৌতুকের টাকা না দেওয়ার কারণে গৃহবধুর আত্মহত্যা করেছে। আবার এমনও দেখা যায় যে গৃহবধূকে হত্যা করা হয়েছে যৌতুকের টাকা না দেওয়ার ফলে। আর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তো নিত্য দিনের ঘটনা। এর ফলে প্রত্যেকটি নারীর জীবনকে যেমন হেয় করা হয়, তেমনিভাবে নারীদের পর্যাপ্ত মর্যাদাও দেওয়া হয় না।
মূলত নারীদের নির্যাতনের বা অত্যাচারের অন্যতম মাধ্যম হলো যৌতুক প্রথা। নারীদের পর্যাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এই যৌতুক প্রথার কারণে। কেননা যে সকল পরিবার যৌতুকের টাকা পরিশোধ করতে পারে না, সে সকল পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের কথা শোনানো হয়। পাশাপাশি সেই মেয়েকেও নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়। আর তার অধিকারও তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে দেওয়া হয় না। তাকে সংকুচিত করে রাখা হয় এবং তাকে কোন ধরনের স্বাধীনতা দেওয়া হয় না। এর ফলে একজন নারীর পরিপূর্ণ বিকাশ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ভাবে তাকে অবমূল্যায়নও করা হচ্ছে যা কখনোই উচিত নয়।
তাই যৌতুক প্রথা নিরসনে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং যৌথভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর বাল্যবিবাহের মতো কুপ্রথাও দূর করতে হবে। কেননা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নারী শিক্ষার অভাবে এবং বাল্যবিবাহের কারণেই নারীরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়। নারীদের পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে তাহলে নারীরা সচেতনতা অবলম্বন করতে পারবে এবং যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে। সেই সাথে সমাজের প্রত্যেকটা ব্যক্তির উচিত যৌতুক প্রথা নিরোসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেন এই ধরনের কুপথা সমাজে বাসা বাঁধতে না পারে।
যৌতুক প্রথা অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু এগুলোই। এই বিষয়গুলো যদি পরীক্ষার্থী পরীক্ষার খাতায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে অনেক ভালো নম্বর অর্জন করতে পারবে। কেননা যেকোনো টপিকের মূল বিষয় যদি সুন্দরভাবে পরীক্ষার খাতায় লেখা যায়, তাহলে অনেক ভালো নম্বর অর্জন করা যায়। আর মূল বিষয়গুলো বুঝতে পারলে অনায়াসে খুব সুন্দর ভাবে লিখাও যাবে। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।