মোবাইল ফোন রচনা

সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। এ ফোনের আকার, আকৃতি ও ব্যবহার পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে এটিকে মুঠা ফোন বলা হয়ে থাকে। এটি টেলিফোনের সর্বাধুনিক সংযোজন। মোবাইল ফোন আজ বিশ্বের মানুষের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। এর রয়েছে ব্যাপক উপযোগিতা। এর ব্যাপক উপযোগিতা সারা বিশ্বে এটি দ্রুত সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন দেশ নেই যেখানে সেলুলার ফোনের ব্যবহার নেই।

সেলুলার বা মুঠোফোন বিশ্ববাসীকে যেন এক নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে এসেছে। এ ফোন সারা বিশ্বের যোগাযোগের সার্বিক অবস্থাতে নতুনত্ব দান করেছে। মোবাইল ফোনের অপর নাম সেলুলার ফোন। এটিকে মুঠোফোন ও বলা হয়ে থাকে। এটি যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকতম সংস্করণ। এ ফোন সহজে ও সর্বত্র বহনযোগ্য। টেলিফোন বা ল্যান্ড ফোন ব্যবহারের জটিলতা দূর করতে এ ফোনের আবিষ্কার। হাতের মুঠোয় সহজে গ্রহণযোগ্য সেটে সিম কার্ড বা রিম কার্ড ব্যবহার করে এ ফোন ব্যবহার করা হয়। বর্তমান বিশ্বে রয়েছে মোট চার প্রযুক্তির মোবাইল ফোন।

বিজ্ঞানী গ্রাহামবেল ঊনিশ শতকে টেলিফোন আবিষ্কার করেন। টেলিফোন আবিষ্কার এর পরবর্তী সময়ে এটিকে আরো সহজতরর ও সর্বত্র বহনযোগ্য করার প্রচেষ্টা শুরু করা হয়। এ প্রচেষ্টার ফলে আবিষ্কৃত হয় সেলুলার ফোন। আধুনিক বিজ্ঞানের বিষ্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয় এটি। বাণিজ্যিকভাবে সেলুলার ফোনের প্রচলন শুরু হয় বিশ শতকের শেষ পর্যায়ে। এ ফোন প্রথম ব্যবহৃত হয় জার্মানিতে। পরবর্তীতে সারা বিশ্বে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সেলুলার ফোন।

১৯৯৩ সালে সিটি সেল কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ করে। মোবাইল ফোন বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। এর আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থার থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। মানব জীবন হয়েছে অধিকতর গতিশীল। বিশ্বের যে কোন মানুষের সাথে যে কোন মুহূর্তে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে আমরা আমাদের যে কোন তথ্য বিশ্বের যেকোন প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারি।

সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়েছে। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সময় বিশ্বের যে কোন খবরা-খবর জানতে পারছি এবং তথ্য আদান প্রদান করতে পারছি। মোটকথা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যেন আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। মোবাইল ফোন বর্তমানে বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা রেডিওর অনুষ্ঠান শুনতে পারি, টেলিভিশন দেখতে পারি, বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলতে পারি, রেকর্ডকৃত গান বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতে পারি। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন ক্লান্তি দূর করে আমাদেরকে প্রাণবন্ত করে তুলছে। কাজেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মোবাইল ফোন অবসর সময় কাটানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংকিং লেনদেন শুরু হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যায় এবং টাকা ওঠানো যায়।

মোবাইল ফোনের যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে তেমনি এর নেতিবাচক দিকও কম নয়। মোবাইল অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য হলেও বর্তমানে এটি ফ্যাসান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে অপ্রয়োজনেও মোবাইল ব্যবহার করছে। ফলে আর্থিক অপচয় হচ্ছে। প্রতীক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতি সাধন করে থাকে। যেমন_অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, হৃদ রোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় ইত্যাদি। এছাড়া গবেষকদের কেউ কেউ বলেছেন_মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।

সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন, যাকে আমরা মুঠোফোন বলে থাকি। এ ফোন বিজ্ঞানের এক অভিনব সংযোজন। দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে এ ফোন। এর ব্যাপক ব্যবহার এর আবিষ্কারকের স্বার্থক করে তুলেছে। কতিপয় খারাপ দিক থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন আধুনিক সভ্যতার আশীর্বাদ বলা যায়।