বাংলাদেশের কৃষক রচনা

সুজলা- সুফলা-শস্য-শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতির অফুরন্ত স্নেহের দান। বাংলাদেশের মাটিতে সোনা ফলে। বাংলাদেশের কৃষি সম্পদ অপূর্ব। এর কারণ এখানকার ভূমি অতিশয় উর্বরতা, তার ওপর সমগ্র দেশের ওপর দিয়ে পদ্না,মেঘনা, যমুনা, বহ্মপুত্র প্রভৃতি অসংখ্য নদীর কলস্বরে বয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এই দেশে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় আর কোথাও সেরকম হয় কিনা সন্দেহ। এজন্য এবং আরো অনেক কারণে এখানকার সুবিস্তীর্ণ প্রান্তরগুলোতে এবং নদীর পলি মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণে শস্য উৎপন্ন হয়।

সবচেয়ে হতভাগ্য আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়। বাংলাদেশের কৃষক অদম্য অধ্যাবসায়ের কারণে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাটিতে সোনা ফলায়, অথচ তারায় আজ অনাদৃত, উপেক্ষিত। এক কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের কৃষক সারাদেশের খোরাক যোগায়, অথচ তারা হেয় ও অপমানিত। বাংলাদেশের কৃষক ও শ্রমিক সম্প্রদায় যেরূপ স্বার্থ ত্যাগ করে নিরবে দুঃসহ, অত্যাচার সহ্য করে আসছে, সেরুপ আর কোথাও দেখা যায় না। এ দোষ কাদের?এ দোষ আমাদের বাংলাদেশের অধিবাসীদের।

আমরা অত্যন্ত বিলাসী হয়ে পড়েছি। নিজেদের কোন পরিশ্রমের কাজ করতে হয় না বলে যারা কায়িক পরিশ্রমের দ্বারা আমাদের বাবুগিরির খোরাক যোগাচ্ছে তাদের ঘৃণা করতে শিখেছি। কিন্তু আমরা একবারও ভেবে দেখি না যে, শারীরিক পরিশ্রমে দোষ কোথায়? বিশেষ করে খাদ্য শস্য উৎপাদন করার জন্য যে পরিশ্রম সে তো গৌরবের। আধুনিক প্রগতির যুগে আমাদের এ কথাও অবশ্য স্বীকার করা উচিত যে, কৃষি কাজে অধিকতর উন্নতির আশা করতে হলে আমাদের সর্বাগ্রে চাই এ সকল কৃষকের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার করা। যাহোক সর্বাঙ্গীন উন্নতির বিধান করতে হলে, সর্বপ্রথম চাই শিক্ষা। কি করে অল্প আয়েশের সামান্য পরিশ্রমে অধিক ফসল উৎপন্ন করা যায়, কিরূপ কৌশল অবলম্বন করে বা কিরূপে বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে চাষ ও জমিতে জল সেশন করা যেতে পারে এই সকল প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি বিষয় কৃষকদের শিক্ষা করা উচিত, কেবল ভুতের মত খেটে গেলেই চলবে না।

আজকাল পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃষিকাজ চলছে। এসব দেশের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে হলে আমাদের দেশেও বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করা উচিত। ইউরোপ ও আমেরিকায়, চীন ও জাপানে বৈজ্ঞানিক প্রণালী অবলম্বনের ফলে চাষের অনেক সুবিধা হয়েছে। সে সকল দেশে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত পর্যন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া অভিনব উপায়ে জমিতে সার দেওয়া, বীজ বপন করা প্রভৃতি তো আছেই। আমাদের দেশে হাতে-কলমে বৈজ্ঞানিক কৃষি শিক্ষার অভাব রয়েছে। শতকরা ৯৫ জন কৃষক সম্পূর্ণ অশিক্ষিত, নিরক্ষর। বর্তমানে কৃষিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা, উন্নতমানের বীজ বপন, শেষ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে তাদের সঠিক জ্ঞান নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের কোন এলাকায় কোন ধরনের মাটি, তাতে কি সার এবং কোন বীজের প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাটির চাহিদা ও প্রয়োজন মোতাবেক এর খাদ্য দিতে হলে আমাদের এই কৃষকদের হাতে কলমে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। দু একজন সরকারি কৃষি কর্মী কালে ভাদ্রে মাসে একদিন মফস্বলের গ্রাম্য বাজার পর্যন্ত গিয়েই শেষ। এমনকি তারা তাদের ইউনিয়নের ১০ জন কৃষককেও চিনেন না। তারা কৃষকদের মাঠে ময়দানে গিয়ে হাতে কলমে দেখিয়ে শিখিয়ে দিলে কৃষকদের বাস্তব উন্নতি হতে পারে। আমাদের দেশেও বৈজ্ঞানিক চাষাবাদের ধাকা কিছু কিছু এসে লেগেছে। যে কৃষি কাজের নামে সাধারণ বাঙালি গৃহস্থও নাসিকা কুঞ্চন করত, সে কৃষিকার্য শিক্ষা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শত শত ছাত্র অধ্যান করছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি এবং এই কৃষির প্রাণ হচ্ছে কৃষক ।কিন্তু এই কৃষকদের বাংলাদেশের মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবহেলার চোখে দেখে ।তারা তাদের যথাযথ মর্যাদা পায় না। আমাদের সকলের উচিত আমাদের যাদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করতে হয় ,তাদেরকে উপযুক্ত সম্মান দেওয়া । তাদেরকে কখনোই অবহেলার চোখে দেখা যাবে না এবং ধনীক ও কৃষক শ্রেণীর মধ্যে যতদিন না সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে ,ততদিন কোন সমাজ ক বা দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেনা।