বর্ষাকাল রচনা

গ্রীষ্ম তার তীব্র দহন জ্বালায় ধরণীকে প্রায় দগ্ধীভূত করে ফেলে। জীবকুল অস্থির আগ্রহে বর্ষার আগমনের আশঙ্কা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। যে অপেক্ষার আকুলতার ডাকে সাড়া দিয়ে বর্ষা আসে মহাসমারহে। বর্ষার আগমনের তপ্ত ধরত্রী হয় শীতল, স্নিগ্ধ ও সরস। জীবজগতে নেমে আসে শান্তির পরিবেশ। মানুষ শান্তি পায় মনে প্রাণে। আষাঢ় -শ্রাবণ দুমাস বর্ষাকাল। অবশ্য এই ঋতুটি দু’মাসের সময়সীমা মেনে চলে না। আরো কিছু সময় ব্যাপী বর্ষার অবস্থান থাকে। বর্ষা ঋতুটি আসে তার বিষাণ বাজিয়ে। পুঞ্জিভূত কাজল কালো মেঘের আনাগোনা চলে আকাশ জুড়ে। মাঝে মাঝে বিচ্ছুরিত হয় বিদ্যুতের ঝলক আর মেঘের গুরুগম্ভির কর্ণ বিদারী আওয়াজ। বইতে থাকে দমকা হাওয়া, সেইসাথে চলে বারিবর্ষণ। মুষলধারায় আবার কখনো বা ঝিরিঝিরি বর্ষণ। দিন -রাতের ব্যবধান মানে না বর্ষার ধারা। ব্যাঙের কলরব আর ঝিল্লির ঐক্যতানে সে এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয় প্রকৃতিতে।

বর্ষার আসল রূপ-বৈচিত্র খোলামেলা আঙিনায় ফুটে ওঠে মোহনীয়ভাবে। বর্ষার বারিধারার কোমল স্পর্শে গাছপালা সজীব হয়ে ওঠে, সেই সাথে সবুজে সবুজে সবুজের মেলা। বাতাসের ছোঁয়ায় দূলে বেণুবন। যেন কোন অজানা মায়ায় রাজ্যের হাতছানি দেয়। কদম ডালে জাগে শিহরণ। মৌমাছির দল কদম কেতকির ফুলে ফুলে করে আনাগোনা। বর্ষার নদী -নালা, খাল- বিল ভরে ওঠে পরিপূর্ণতা নিয়ে। শত আশা বুকে নিয়ে আনন্দের সাথে কৃষক লাঙ্গল কাঁধে জমি চষতে মাঠে যাই। ছোট বিল ও নদী- নালায় ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে মাছ ধরার খেলায় মেতে ওঠে আর হল্লা করে। হাসনা হেনা, জুঁই, শেফালী ফুলের মত মন মাতানো গন্ধে পল্লী মায়ের বর্ষা অপরূপ মাধুর্য বিলিয়ে সার্থকতা লাভ করে।

বর্ষাকালে পল্লী জননীর মতো শহর মনোমুগ্ধকর হয় না। এখানে ইট- সিমেন্টের তৈরি দালান কোঠার সমারোহ বেশি। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি জমে রাস্তা ডুবে যায়। নর্দমা আর আবর্জনার আধার গুলো থেকে ময়লা পানির সঙ্গে মিশে একটা ক্লেদপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে। যদিও বর্ষা শহরে চলাফেরার অসুবিধার সৃষ্টি করে তবুও বর্ষার আমেজ মানুষের মনে ভাবান্তর আনে। বর্ষার দিনে ছুটির দিনগুলো স্বপ্নময় মায়ার স্পর্শ বুলিয়ে দেয়। বাদলা ঝরার রিমঝিম তান অল্প সময়ের জন্য হলেও মনে ভাবান্তর বয়ে আনে।

কৃষি প্রধান আমাদের দেশ। বর্ষা ঋতু এদেশের মানুষের কাছে খোদার আশীর্বাদ। বাংলাদেশের অধিবাসীদের অন্ন সংস্থানের পরম সহায়ক এ বর্ষায। হেমন্তের যে সোনার ফসল আমাদের কৃষকেরা ঘরে তুলে সে তো বর্ষার অফুরন্ত দান। সফলতার জন্য সুজলা -সুফলা, শস্য- শ্যামলা নামের গৌরবে গৌরবান্বিত আমাদের জন্মভূমি। অপরূপা বর্ষা এদেশের কবিদের কল্পনাকে প্রভাবিত করে। যার ফলে বর্ষার উপর ভিত্তি করে অনেক গান কবিতা রচিত হয়েছে যুগে যুগে। কবিশ্রেষ্ঠ কালিদাস, বিশ্ব নন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষার কবি হিসেবে পরিচিত।

অনাবৃষ্টি যেমন আমাদের জীবনে দূরদর্শন নিয়ে আসে, অতিবৃষ্টিও তেমনি। অতিরিক্ত বর্ষণের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। মাঠ – ঘাট, ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যায়। এতে কেবল ফসল হানিই হয় না, জনপদ ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়। যাতায়াতের পথ হয়ে ওঠে দুর্গম। প্রাণহানিও ঘটে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহায়। তাছাড়া নানা রকম রোগ মহামারি আকারে দেখা দেয়। জনজীবনে নানাবিধ অসুবিধা সত্ত্বেও বর্ষা আমাদের সংসারে ও সমাজ জীবনের স্থায়ী আনন্দের উৎস। এ বর্ষায় আমাদের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার করে। পাটা আর ধান উৎপাদনের মাধ্যমে সমাধান করে অর্থনৈতিক খাদ্য সমস্যা। বর্ষাকে বাদ দিয়ে সুজলা -সুফলা, শস্য -শ্যামলা বাংলা কে কল্পনা করা যায় না।

মূলত এই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে বর্ষাকাল রচনায় লিখতে পারলে অনেক ভালো নম্বর পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সুতরাং আপনারা যারা বর্ষাকাল রচনাটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে লিখতে চান বা উপস্থাপন করতে চান, তারা আজকের পোস্টের সহায়তা নিতে পারেন। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের জন্য অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।