দেশ মাতৃকার বরেণ্য সন্তান মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালবাসতেন। কৃষকের ঘরে তার জন্ম বলে কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের দুঃখ -বেদনা আপন হৃদয় দিয়ে তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। বাল্যকালে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী ও কর্মচঞ্চল। তিনি দুচোখ ভরে বাংলার প্রকৃতিকে দেখতেন। অনেক সময় তিনি নীল আকাশে উড়ে যাওয়া মুক্ত পাখির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। চাষীদের কঠোর পরিশ্রম মজুরের কষ্ট দেখে তিনি হৃদয়ের ভিতর গভীর এক কম্পন অনুভব করতেন। তাই তিনি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের বীমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারি স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯১৪ সালে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এই স্কুলে একবার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এসেছিলেন। তার সংস্পর্শে এসে রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত হয়ে ওঠেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আইএ ও ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এ সময় তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়াকালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান সরকার তাকে গ্রেফতার করে। ফলে তার আইন পড়া সম্ভব হয়নি।
বিশ্ব রাজনীতির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি তথা বাংলা ও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করার আগেই গ্রামের হত দরিদ্র মানুষের দুঃখ দেখে নিজের মনের ভেতর এক প্রকার কষ্ট অনুভব করতেন। ভুখাদের মুখে তার নিজের খাবার তুলে দিয়েছেন এমন ঘটনা একটি, দুটি নয়, বরং অনেক। তাছাড়া শীতকালটা এলেই অনেক অসহায় শীতার্তকে তিনি তার নিজের চাঁদর দান করে দিয়েছেন। অধিকন্তু তখন থেকেই তিনি ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতেন। অন্যায় কিংবা অন্যায়কারী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতিবাদ করতে বিন্দু পরিমাণ বিচলিত হতেন না। আর রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ করে দেশ ও জাতির অঘোষিত বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তাঁর চোখে -মুখে একটি স্বপ্ন- বাঙালি জাতির হৃত অধিকার পুনরুদ্ধার করা যা ১৭৫৭ সালে পলাশী প্রান্তরে হারিয়ে যাই।
বাঙালি জাতির আশা- আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মূর্ত প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, দৃঢ় মনোবল ও সাহসই তার চারিত্রকে বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছে। তার সম্পর্কে মতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আবেগপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল মানুষ। শত্রুর প্রতিও ছিল তাঁর মনোভাব উদার। গুরুতর অপরাধ করলেও তিনি অপরাধীকে অবলীলা ক্রমে ক্ষমা করে দিতেন। তিনি ছিলেন একজন যাদুকরী বক্তা। তার ভাষণ শুনে সবাই মুগ্ধ হযে যেত। এজন্য তিনি বজ্রকন্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও জুলুমের সাথে তিনি কোনদিন আপস করেননি। শান্তি প্রতিষ্ঠার অবদানের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক ‘জুলিও কুরি ‘শান্তি পদক লাভ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপায় সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ায়। আর কোনদিন ফিরবে না বাঙ্গালীদের দুঃখ শোনার জন্য। কিন্তু তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন। আমাদের মনের মনিকোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন। যতদিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বহমান থাকবে, যতদিন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়বে ততদিন দেদীপ্যমান থাকবে একটি নাম শেখ মুজিবুর রহমান।