নতুন আবিষ্কৃত করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে মানব শরীরের যে রোগ সৃষ্টি হয়, তার নাম কোভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাস ডিজিজ ২০১৯। করোনার ‘কো’, ভাইরাসের ‘ভি’, ডিজিজের ‘ডি’এবং ২০১৯ থেকে ‘১৯’ নিয়ে এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে ‘কোভিড ১৯’। এই ভাইরাসটি অতীতের অন্যান্য করোনা ভাইরাস যেমন_ সার্স,মার্স থেকে জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে ভিন্ন। তাই বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের সাধারণ নাম দিয়েছেন ‘নোভেল করোনাভাইরাস’। ‘কোভিড ১৯’ একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি, যা গুরুতর শ্বাসযন্ত্রীয় রোগ লক্ষণ সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস ২ (সার্স কোড ২) নামক এক ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে হয়ে থাকে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে সর্বপ্রথম এ ভাইরাস ধরা পড়ে। করোনাভাইরাস অল্প দিনের মধ্যে পূর্বের সকল মহামারীকে ছাড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। নভেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ৫১ লক্ষাধিক মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। এমনকি এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে কয়েক কোটি মানুষ ‘কোভিড-১৯ ‘আক্রান্ত হয়ে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। এটি চিনে তার মহামারী রূপ প্রদর্শনের পর পর্যায়ক্রমে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়াসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ‘কোভিড ১৯’ উহানে অবস্থিত দক্ষিণ চীন সাগরের সামুদ্রিক খাবারের পাইকারি বাজার থেকে ছড়িয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
বিজ্ঞানীদের ধারণা সেখানে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর মাংস ছাড়াও জীবন্ত সাপ বা বাদুড় জাতীয় কোন প্রাণী এই ভাইরাসের উৎস। তবে অনেকে মনে করেন, উহানের কোন ল্যাব থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে। মানব শরীরে করোনাভাইরাস ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। এর প্রভাবে জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে যাওয়া, বমি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। তবে কোন লক্ষণ ছাড়াও অনেকে ‘কোভিড ১৯’ শরীরে বহন করতে পারে। আর এই উপসর্গ বিহীন রোগীদের দ্বারাই এই ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
‘কোভিড ১৯’সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ বা হাঁচি ও কাশির ফলে নির্গত জলীয় কণার মাধ্যমে ছড়ায়। ‘কোভিড ১৯’ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে সাধারণত ৫-৬ দিনের মধ্যে তার উপসর্গ দেখা দেয়। তখন সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীকে ১৪ দিন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। করোনার কারণে মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এই পরিস্থিতির সামলাতে গিয়ে অনেক অফিস, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে দেউলিয়া হতে হয়েছে।আরটিপিসিআর, রেপিড এন্টিজেন্ট টেস্ট প্রভৃতি পদ্ধতির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস রোগ শনাক্ত করা হয়। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের টিকা আবিষ্কারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে ইতোমধ্যে সফল হয়েছেন।
বিশ্বব্যাপী মানব শরীরে এই টিকা প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্স নভেম্বরের ২৩ তারিখে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিল থেকে মানবদেহের প্রয়োগের নৈতিক অনুমোদন পেয়েছে। অল্প সময়ের ব্যবধানে করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থবির করে দেয়। এর প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায়, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে, শেয়ারবাজারে, পর্যটন শিল্পে। মোটকথা ‘করোনা ভাইরাস’ থমকে দেয় বিশ্ব অর্থনীতির চাকাকে। করোনা ভাইরাস রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ব্যক্তিগত ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই।
তবে সেরা প্রতিকার হবে নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তাই টিকা গ্রহণের পাশাপাশি সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম ব্যায়াম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ঘরে বাইরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব।করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ছোট বড় সব দেশেই। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, পর্যটন সহ সকল ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য শত্রুকে রুখতে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। বর্তমানে এর সংক্রমণের মাত্রা কমে গেলেও সরকারি বিধি-নিষেধ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।