স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা মানব জীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর অনেক জাতিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশও এমনিভাবেই স্বাধীনতা পেয়েছে। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পরাধীনতার গ্লানি ধুয়ে মুছে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আজ বাংলাদেশ একটি গৌরবময় স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। প্রতিবছর ২৬ মার্চ এ দেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় জাতীয় মর্যাদার সাথে। দিনটি আমাদের কাছে আনন্দের ও গৌরবের।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী বৈষম্যমূলক আচরণ করে পূর্ব বাংলার মানুষ তথা বাঙ্গালীদের সাথে। প্রথমে বাঙ্গালীদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হয়। সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে একক ভাবে রাষ্ট্রভাষা মর্যাদা দেওয়া হল। বাঙালিরা তা মেনে নিল না। গড়ে উঠলো ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার তরুণদের জীবন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙ্গালীদের রাজনৈতিক ঐক্য যুক্তফ্রন্ট বিজয় অর্জন করল। অল্পকালের মধ্যে ভেঙে দিল প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকার। গড়ে উঠলো ছয় দফা ও ১১ দফা আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমে ক্রমে প্রবল গণ আন্দোলনে রূপ লাভ করল। আবার হত্যাকাণ্ড ঘটলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। গণআন্দোলন গনবিস্ফোরণে পরিণত হলো।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর ১০ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রুপ লাভ করে। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে এ যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। অভিজ্ঞ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে প্রতিরোধ ব্যূহ। হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় অগণিত মানুষের ঘরবাড়ি। যাকে পায় তাকে গুলি করে মারে। লুটপাট চলে। এ অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত বাঙালিরা পাকিস্তানের সাথে বিদ্রোহ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল- তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর এই দিনটি একটি স্মরণীয় দিবস হিসেবে জাতীয় মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। এদিন দেশের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারী- বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকে। দিবসটি উদযাপনের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সমস্ত ভবনে জাতীয় পতাকা উড়ানো হয়। ঢাকায় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার অনুষ্ঠান। সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজে অনুষ্ঠিত হয়। ভোরবেলা গণ জমায়েত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে, ফাতেহা পাঠ করা হয়, শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পুষ্প স্তবক অর্পণ করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও শহিদ মিনারে এবং বিদ্যালয়গুলোতে নানা উৎসব আয়োজন হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মসজিদ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। খেলাধুলা হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকার শোভা পায়। এভাবে সমগ্র দেশে ঘটা করে বিশেষ মর্যাদার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। পরাধীন জাতি পশুর চেয়েও অধম। স্বাধীনতা এত আনন্দের, এত গৌরবের। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। দেশের প্রতি মানুষের মনে নতুন করে ভালোবাসা জন্ম নেয়, নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয় মানুষ। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার শপথ হোক স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূল মন্ত্র।