পরিবেশ দূষণ রচনা

প্রাণের বিকাশের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। মানুষকে মমতা দিয়ে আগলে রাখে পরিবেশ। জন্ম লগ্ন থেকে জন্মস্থানের পরিবেশে পালিত মানুষ জন্মস্থানের প্রতি আত্মস্থ ও অভ্যস্ত হয়ে যায়। এই পরিবেশকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। মানুষের অন্য, বস্ত্র, পানি, বায়ু প্রভৃতি সব আসে পরিবেশ থেকে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ অপরিহার্য। তাই পরিবেশকে বলা যায় মানুষের পরম বন্ধু।

তবে দুঃখের বিষয় এই যে মানুষই আজ হয়ে উঠেছে পরিবেশের প্রধান শত্রু। প্রকৃতির সাথে যে সমাজ ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলে এসেছে তার বিঘ্ন ঘটিয়ে বেপরোয়া ভাবে দূষণ করে চলেছে নির্বিচারে। প্রকৃতি সংহার এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ পৃথিবীতে ডেকে এনেছে ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারী। মানুষের কর্মকান্ডের ফলে বায়ু, পানি, মাটি নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। এই দূষণের ফলে পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন।

পরিবেশ দূষণ বলতে আমরা মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ বুঝি। পরিবেশ দূষিত হয় মূলত বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, মাটি দূষণ, শব্দ দূষণ ও পারমাণবিক দূষণের মাধ্যমে। পরিবেশ দূষণের কারণে আমাদের জীবনযাত্রার সাচ্ছন্দ নানাভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বায়ু হলো পরিবেশের অন্যতম প্রধান উপাদান। বায়ুমন্ডল আছে বলে পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব টিকে আছে। আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান অক্সিজেন আমরা এই বায়ু থেকে গ্রহণ করি।

কিন্তু নানা কারণে এই বায়ু আজ দূষিত হচ্ছে। কলকারখানার কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। এছাড়া যানবাহনের কালো ধোয়াও বায়ু দূষিত করে। গাড়ি যখন চলে তখন অক্সিজেনের সঙ্গে কার্বনের দহনে শক্তি উৎপন্ন হয়। দহন কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হলে কার্বনের সাথে আরো কতগুলো গ্যাস নির্গত হয়। তাদের মধ্যে ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড থাকে। এই গ্যাস পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বায়ু দূষণের কারণে মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পানির অপর নাম জীবন। আমাদের পৃথিবীর তিনভাগ পানি আর বাকি এক ভাগ স্থল। এই পানি ছাড়া প্রাণিজগতের কথা চিন্তাই করা যায় না। অথচ এই পানি আজ দূষিত হয়ে পড়েছে এবং মানুষ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন নদীর তীরে অসংখ্য কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কলকারখানায় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বর্জ্য নিয়মিতভাবে নদীগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়। এছাড়া রয়েছে গৃহস্থের উচ্ছিষ্ট এবং কর্পোরেশনের আবর্জনা। এসব ময়লা আবর্জনা দূষণ প্রক্রিয়াকে আরও বৃদ্ধি করে চলছে।

আবার শব্দ দূষণ বর্তমান সময়ে এক মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রিয় ২০ থেকে ৪০ ডেসিবল মাত্রার শব্দের স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ ক্রিয়া করে থাকে। কিন্তু এই মাত্রা অতিক্রম করলে তাকে আমরা বলি শব্দ দূষণ। যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন, কলকারখানা শব্দ, মাইকের আওয়াজ প্রভৃতি বেশিরভাগ সময় সত্তর ডেসিবল অতিক্রম করে। শব্দ দূষণের ফলে মানুষ স্নায়ুবিক দুর্বলতা, অস্বস্তি, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদিতে ভোগে।

এছাড়াও রয়েছে মাটি দূষণ, পারমাণবিক বোমা ও পরিবেশ দূষণ, বৃক্ষ নিধন, পানিতে আর্সেনিক, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি প্রভাব। এ সকল প্রভাবে ও পরিবেশ সামগ্রিকভাবে দূষিত হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ দূষণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমাদের স্বেচ্ছাকারী আক্রমণের ফলে দিন দিন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ দূষণের ফলে আবহাওয়াও পরিবর্তিত হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায়ই দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ পরিস্থিতি মানবজাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই আমাদের পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পরিবেশের এ ধরনের সামগ্রিক ক্ষতি কখনো পুষানো সম্ভব হবে না। এজন্য আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে আর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।