বিজ্ঞানের জ্ঞানকে যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন আবিষ্কার ও উৎপাদনের রূপ দেয়া হয় তাকে বলে প্রযুক্তিবিদ্যা। বিজ্ঞান যখন মানুষের প্রয়োজনের সীমায় বাঁধা পড়ে তখন প্রযুক্তিবিদ্যার জন্ম হয়। আর তথ্যপ্রযুক্তি হলো কম্পিউটার কিংবা টেলি যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যে তথ্য সংরক্ষণ, গ্রহণ প্রেরণ, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির উদ্দেশ্য তথ্যের সরবরাহ সুনিশ্চিতকরণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রাকে সহজসাধ্য করা। তথ্য প্রযুক্তি ব্যতিরেকে আধুনিক সভ্যতার কথা চিন্তা করা যায় না। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের অগ্রগতির মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা। সভ্যতার অগ্রযাত্রার পেছনে কাজ করছে আধুনিক বিজ্ঞানের বিচিত্র আবিষ্কার এবং সেগুলো মানব কল্যাণের ব্যবহারের বিভিন্ন প্রচেষ্টা। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তথ্যপ্রযুক্তি।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে সুখ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন এনে দিয়েছে। ফলে মানুষ উন্নত চিন্তা ও চেতনার প্রতিফলন ঘটিয়ে নব নব আবিষ্কারে পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজানোর কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর বিজ্ঞানের সব রকম চেষ্টা, চিন্তা, আবিষ্কার তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষের কাছে অতি দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। আধুনিক যুগে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিবিদ্যা একই স্রোত ধারায় আবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিবিদ্যার কারিগরি জ্ঞান মানুষকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে। প্রযুক্তিবিদ্যায় সভ্যতা কে আধুনিক করে তুলেছে। মানুষের যখন যান্ত্রিক শক্তি অজানা ছিল তখন জীবন সংগ্রামে মানুষ শ্রমকেই আশ্রয় করেছিল। আধুনিক যুগে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশে পৃথিবী জুড়ে নবচেতনার সঞ্চার হয়েছে এবং তা পৃথিবীকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করছে।
প্রযুক্তি মানুষের উপকারি বন্ধুর মতো। আর তথ্যপ্রযুক্তি হচ্ছে মানুষের জীবন যাপনের অঙ্গ। তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করছে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ যেখানে মানুষ আছে, সেখানেই পৌঁছে গেছে বিজ্ঞানের কল্যাণের আলো। মানুষের মৌল-মানবিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনীয় উপাদানের যোগানে তথ্যপ্রযুক্তি নানাভাবে সহায়তা দান করছে। বিশ্বের জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতির উন্নতি ও সমৃদ্ধি সাধনে তথ্য প্রযুক্তি সহায়তা করছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এর মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের আরেকটি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। পৃথিবীর লক্ষ্য লক্ষ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে আছে ইন্টারনেট। রাজনীতি, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রেই ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ অবারিত হচ্ছে।
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে মানুষ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমান বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর অপরের সাথে পারস্পারিক শক্তি প্রদর্শনের হীন মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ও চর্চার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। সরকার প্রযুক্তি নির্ভর একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, টেক্সট বুক সফট কপির ব্যবস্থা, অনলাইনে বিভিন্ন সরকারি চাকরির আবেদন, ফি জমাদান, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি আবেদন ফরম জমা দেওয়া প্রভৃতি কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে। সারা দেশের জেলাগুলোর সমস্ত তথ্য এবং প্রতিদিন ঘটে যাওয়া তথ্য জানার জন্য সরকার জেলা তথ্য বাতায়ন নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। শুরু হয়েছে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা।
তথ্য প্রযুক্তির ক্রমবিকাশে পৃথিবীর প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। সাইবার মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট এবং নতুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এর হাত ধরে অনলাইন আজ বিশ্বের অবিচ্ছেদ একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম। বিশ্বের অধিকাংশ কাজে মোবাইল এর মত সহজে পৌঁছে যাচ্ছে ইন্টারনেটের সুফল। ব্যবসায়, বিপণন, ভার্চুয়াল যোগাযোগে এ তিন পথই এখন তথ্য প্রযুক্তির প্রধান প্রযুক্তি ইন্টারনেটের দখলে। পরবর্তী সময়ে এই তথ্য প্রযুক্তিই বিশ্বের পুরো কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করবে। গবেষকরা জানিয়েছেন_ তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবিক উন্নতির মাধ্যমে বিশ্বের অনুন্নত জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে।