কম্পিউটার রচনা

বিশ শতকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অভাবনীয় উন্নতি লাভ করেছে। প্রযুক্তি বিদ্যার প্রভাবে শুধু শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যা ছাড়া বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর জীবনযাত্রা প্রায় অচল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তি বিদ্যার প্রভাব এত ব্যাপক না হলেও সেখানে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মান যে প্রযুক্তিবিদ্যার উপর নির্ভরশীল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কম্পিউটার প্রযুক্তিবিদ্যার সারিতে এক বিস্ময়কর সংযোজন। যার আভিধানিক অর্থ গণনাকারী বা হিসাব কারী যন্ত্র। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা মানুষের কাজের ব্যাপক অংশ নিজেই করে দিচ্ছে। সমগ্র পৃথিবীকে এনে দিয়েছে নিজের ঘরে। তাই মানুষ আজ হয়ে পড়েছে কম্পিউটার নির্ভর।

কম্পিউটার বলতে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বোঝায়, যা অগণিত উপাত্ত গ্রহণ করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিশ্লেষণ করে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। কম্পিউটার শব্দটি ইংরেজি এবং এর অর্থ হল গণকযন্ত্র। কম্পিউটার হিসাবের যন্ত্র হিসেবে যোগ বিয়োগ, গুন ভাগ জাতীয় অংক কষতে পারে। এছাড়া তথ্যাদির বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে এ যন্ত্রটির। গণিত, যুক্তি ও সিদ্ধান্ত মূলক কাজের সঙ্গে কম্পিউটারের সংযোগ। কাজের গতি, বিশুদ্ধতা ও নির্ভরশীলতার দিক থেকে কম্পিউটারের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। সু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের গণনার প্রয়োজন হয়েছে এবং মানুষ বিজ্ঞান চিন্তার মাধ্যমে চেষ্টা করেছে কত সহজে গণনা কার্য সম্পন্ন করা যায়। আবিষ্কার করেছে বিভিন্ন গণনাকারী যন্ত্র।

আবিষ্কার করেছে বিভিন্ন গণনাকারী যন্ত্র। ক্রমোন্নতির ফলে আজকে যা রুপ নিয়েছে বিস্ময়কর কম্পিউটারে। কম্পিউটারের প্রাথমিক ধারণা আসে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ পরিকল্পিত একটি গণকযন্ত্র থেকে। নির্ভুল এবং দ্রুত গননার প্রয়োজনীয়তা ব্যাবেজকে এ পরিকল্পনায় প্রেরণা জুগিয়েছে। বেবীজের এই পরিকল্পনা রূপায়িত হতে সময় লেগেছিল এক শতাব্দী, কারণ তার ভাবনার সঙ্গে সমসাময়িক প্রযুক্তিবিদ্যা তখন তাল মিলাতে পারেনি। ব্যাবেজের আগে ও পরে যে ধরনের গণক যন্ত্র প্রচলিত ছিল, সেগুলো স্বয়ংক্রিয় নয়, একবারে একটির বেশি গণনা অথবা দুইটির বেশি সংখ্যা এক সঙ্গে ব্যবহার করা যেত না। তার পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের গাণিতিক ইউনিট, স্মৃতি নিয়ন্ত্রক ইউনিট, ইনপুট, আউটপুট অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর ইলেকট্রিক মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের সাথে সাথে কম্পিউটারের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়।

প্রথমদিকে নির্মিত পেন্সিল্ভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিয়াক নামের কম্পিউটারের ওজন ছিল ৩০ টন এবং এর আয়তন ছিল বিশাল। ৪০ ফুট লম্বা ও বিশ ফুট প্রস্থ ঘরের সবগুলো দেওয়াল জুড়ে এর যন্ত্রপাতি ছিল। ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি হল প্রথম স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক কম্পিউটার। ইলেকট্রনিক্স শিল্পের দ্রুত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার হয়েছে অনেক সহজলভ্য। বর্তমানে কম্পিউটার একটি দেওয়াল ঘড়ির বা একটি ডায়েরির সমান আকারে নেমে এসেছে। বিজ্ঞানীর গবেষণাগার ছেড়ে এখন দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনে তার প্রতিষ্ঠা। উন্নত জীবন যাপন প্রণালীতে কম্পিউটারের ব্যবহার অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা অনেক। কম্পিউটার মানব সভ্যতার উন্নয়নের জাদুকাঠি এ কথা যেমন সত্য,এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে _একথাও অস্বীকার করা যায় না।

আধুনিক জীবনযাত্রায় কম্পিউটার একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে অর্থবহ ভূমিকা রেখে চলেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত দুই- তিন দশকে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে কম্পিউটারের বিকাশ ছাড়া তার বেশিরভাগই সম্ভব হতো না। মুদ্রণ জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছে কম্পিউটার। ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে মুহূর্তেই বিশ্বের যে কোন জায়গায় যে কোন তথ্য আদান-প্রদান করা যাচ্ছে। মানুষের অসাধ্য ও বিপদজনক কাজল কম্পিউটার নিয়ে এসেছে অকল্পনীয় সাফল্য। সভ্যতায় কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। এ কারণে কম্পিউটার আমাদের আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য উপাদান। কম্পিউটার যন্ত্রটি মানুষের দেওয়া যৌক্তিক তথ্যের ভিত্তিতে কাজ করে এবং নির্দেশনা অনুসারে তথ্য প্রদান করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজকর্মে কম্পিউটারের বিশেষ অবদান রয়েছে।