আমাদের বিদ্যালয় রচনা

প্রকৃতির সুরম্য লীলা নিকেতন এ বাংলাদেশ। গ্রাম বাংলার অপূর্ব সুষমায় শোভিত চারঘাট থানার অন্তর্গত অনুপমপুর গ্রামটি । এটি ইতিহাস প্রসিদ্ধ ও ঐতিহ্যের ধারক। বিচিত্র পাখির সুর বৈচিত্রে , সৌন্দর্য ও সুর মাধুর্যে এ গ্রামের লোকজনও হয় আত্মহারা । এই গ্রামেরই এক প্রান্তে আমার প্রাণের প্রিয় অনুপম উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত । এ বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে পদ্মা নদীর শাখা নদী বড়াল নদীটি অবস্থিত । দক্ষিণ দিকে খোলা বিস্তীর্ণ মাঠ। উত্তর ও পশ্চিম রয়েছে ছোট ছোট পাড়া। পশ্চিমে রয়েছে বিরাট মসজিদ।

আমাদের বিদ্যালয়টি পূর্বমুখী । পূর্ব-পশ্চিম বরাবর তিনটি ভবনে খন্ডিত। তিনটি ভবনে মোট ২২ টি কক্ষ আছে। এর পনেরোটি কক্ষে আমাদের বিভিন্ন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। অবশিষ্ট কক্ষগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন একটি কমন রুম, একটি বিজ্ঞানাগার, একটি পাঠাগার, একটি শিক্ষকমন্ডলের কক্ষ, একটি অফিস রুম ও একটি প্রধান শিক্ষকের কক্ষ। এছাড়া একটি মিলনায়তন আছে, যেখানে বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। মিলনায়তনের পাশাপাশি রয়েছে একতল বিশিষ্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । এছাড়া মাঠের পূর্বকোণায় একটি মসজিদ এবং বড় পুকুর রয়েছে ।

আমাদের বিদ্যালয়ের ১৫০০ জন ছাত্রছাত্রী , ৩৫ জন শিক্ষক , তিনজন দপ্তরী , একজন লাইবেরিয়ান ও একজন অফিস সহকারী আছেন । প্রধান শিক্ষক সাহেব একজন এম. এ বি এড । তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও আদর্শ মানব। তিনি তার দক্ষতা ও পান্ডিত্য বিদ্যালয়ের বহু সম্মান বয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যান্য শিক্ষকগণও উচ্চ শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ ।আমাদের স্কুলে একটি লাইব্রেরী রয়েছে । লাইব্রেরী থেকে আমরা পছন্দমত বই নিয়ে পড়াশোনা করতে পারি । আমাদের বিজ্ঞান কক্ষে রয়েছে প্রচুর যন্ত্রপাতি । তাই বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির জন্য আমাদের কোন চিন্তা -ভাবনা করতে হয় না । তাছাড়া শিক্ষকমন্ডলী অতি যত্ন সহকারে আমাদের পাঠদান করে থাকেন।

লেখাপড়ার জন্য চাই সুস্থ শরীর ও সবল মন। এই সবল মন ও সুস্থ দেহের জন্য আমাদের স্কুলে রয়েছে বিভিন্ন রকম খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্য ব্যায়ামাগার। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি খেলা আমাদের বিদ্যালয়ে রীতিমতো হয়ে থাকে। প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আমাদের বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের বিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষিকার অক্লান্ত পরিশ্রমে একটি সাংস্কৃতিক দল গঠিত হয়েছে। প্রতিবছর নবীনবরণ অনুষ্ঠান ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ অনুষ্ঠানে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাট্যাভিনয় হয়ে থাকে ।

প্রতি বছর এদেশের সনামধন্য নাট্যকারের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়ে থাকে । এছাড়া বিতর্ক সভা হয়ে থাকে প্রতি বৃহস্পতিবার । আমাদের বিদ্যালয় হতে প্রতিবছর ছাত্র-ছাত্রীগণ কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে। প্রতিবছর তিন -চার জন মেধা তালিকায় স্থান লাভ করে। শিক্ষক শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের যৌথ প্রয়াসে প্রতিবছরের ফলাফল ৯৩% এর নিচে নামে নি। যদিও আমাদের বিদ্যালয় বাংলাদেশের এক পল্লীতে অবস্থিত, তথাপি বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন তাঁর ঐতিহ্য বজায় রেখে অত্র এলাকায় শিক্ষার আলো দান করে আসছে। এমন একটি বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করে আমি সত্যিই গর্বিত।

শিক্ষকতা হলো একটি মহান পেশা। আর এই মহান পেশার মানুষগুলোই বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়টা প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় গুলো মানুষের জীবনের সোনালী সময় হিসেবে ধরা হয়ে থাকে । মানুষ চাইলেও আর তার শিক্ষা জীবনে ফিরে যেতে পারে না। তাই এই সময়টি তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি হয়ে থাকে।

আমাদের সকলের উচিত এই সময়টাকে কাজে লাগানো এবং মানুষের মত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করা। সেই সাথে সাথে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকেও সম্মান করতে হবে। তারা সম্মানের উপযুক্ত মানুষ । যদি তাদের সম্মান দিতে না জানা হয় তবে সেই শিক্ষার কোন মূল্য থাকবে না। আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক কিছু শেখানো হয়। সেই সাথে সাথে আমাদের আচার-আচরণও শিখানো হয়। এই বিষয়টা আমাদের মাথায় রাখতে হবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে।