ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনা

প্রত্যেকটা জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। আর সবাই তার নিজস্ব ভাষা বা মাতৃভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এরকম বাঙালি জাতির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। আর তাই বাঙালি জাতি তার মায়ের ভাষা বা মাতৃভাষা বাংলাতে মনের ভাব প্রকাশ করে। কিন্তু এই বাংলা ভাষাতে কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য বাঙালিকে নানা রকম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। জীবন দিয়ে বাংলা ভাষার অধিকার কে প্রতিষ্ঠা করেছে বাঙালি। সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউসহ আরো অনেকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা আজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাকে বাঙ্গালীদের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত করা সম্ভব হয়েছে।

আজকে যে আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলাতে কথা বলছি, এই বাংলা ভাষার আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আর আমরা আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে মূলত সেই ভাষা আন্দোলনেরই প্রেক্ষাপট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মূলত আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনাটি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে খুবই সহজ আর সাবলীল ভাবে রচনাটি সাজানো হয়েছে। অনেকে দেখা যায় যে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাই বা এই সম্পর্কে অনেক সময় খোঁজ করেন, তাই তাদের কথা ভেবেই মূলত আজকের আর্টিকেলটিতে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনাটি খুবই সহজভাবে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

মাতৃভাষার অধিকার গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক অধিকার। পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জনের মাতৃভাষা ছিল বাংলা, উর্দু কোন অঞ্চলেরই মাতৃভাষা ছিল না। অথচ উর্দু কে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। অগণতান্ত্রিকভাবে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হয়, তাই ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনের উদ্যোগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

তাদের দাবি ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা। যে কারণে আমরা দেখি ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাকে পরিষদের ব্যবহারিক ভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেন। কিন্তু শুরু থেকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত ছিল না। কিন্তু বাঙালি হল বীরের জাতি। তারা পাকিস্তানীদের চাপিয়ে দেওয়া উর্দুকে কখনো রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। তারা সবসময়ই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার বিপরীতে ছিল এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য সোচ্চার ছিল।

আর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সবসময় নানা রকম সম্মিলিত পদক্ষেপ বাঙালি জাতি নিয়েছে। পাকিস্তানের শাসক তখন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। তখন বাঙালি তা মেনে নেয়নি। সম্মিলিতভাবে তার বিরোধিতা করেছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছে। ১৯৫২ সালেও বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনে লিপ্ত হয়েছিল। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙালি জাতির মৌলিক অধিকার অর্থাৎ ভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু বাঙালি তাদের চক্রান্ত বাস্তবায়িত হতে দেয়নি।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাঙালি তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিশাল আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনে পুলিশ বাঙ্গালীদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন সহ গুলি চালায়। তার পুলিশের গুলিতে অমানবিকভাবে সে আন্দোলনে জীবন দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ আরো অনেকেই। তাদের তাজা প্রাণ এবং তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষা আজ প্রতিষ্ঠিত। বাঙালি জাতি তাদের ভাষার অধিকার রক্ষা করেছে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি বর্তমানে সারা বিশ্ব স্বীকৃত একটি দিন। বর্তমানে এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।