পাকিস্তানি শাসনামলে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বাঙ্গালীদের উপর শাসনের নামে শোষণ- নির্যাতন চালায়। ফলে স্বৈরাচারী শাসকদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ ছিল সকল শ্রেণীর বাংলাদেশের মানুষের আদর্শ এবং নতুন দিনের পথপ্রদর্শক। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে আমাদের জীবনে, আমাদের সাহিত্যের, সংগীতে, শিল্পকলা, স্থাপত্যে, ভাস্কর্যশিল্পে, আমাদের সংস্কৃতিতে। একে আমরা প্রতি বছর অনুভব করি স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ইত্যাদি স্মরণীয় দিবসের মধ্য দিয়ে।
বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছে আমাদের বিজয়ের দিন। সফলতা পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিয়েই আমাদের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে। এখানে খুবই সহজ আর সাবলীলভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রচনাটি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য খুব সহজেই সংগ্রহ করেনিতে পারবেন। তাই আপনারা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রচনাটি সম্পর্কে জানতে চান এবং এই রচনাটি লিখে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতে চান, তারা অবশ্যই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি অনুসরণ করতে পারেন। আশা করি এখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় সকল তথ্য পেয়ে যাবেন।
বাঙ্গালীদের জাতীয় জীবন তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি বলিষ্ঠ চেতনা এবং আত্মপ্রত্যয়ের অঙ্গীকার। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেছেন, “আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী থাকে না, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টিকে না, স্বাধীনতা ব্যতিত জাতি কখনো বাঁচতে পারে না।” বাংলাদেশের মানুষ ও নদীর স্রোতের মতো চিরন্তন সত্যের পথ ধরে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয় সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভূত হয়ে এনেছিল স্বাধীনতার কাঙ্খিত সূর্যকে। প্রায় ৩০ লক্ষ প্রাণ এবং আড়াই লক্ষ মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির বিনিময় এ দেশবাসী যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তাকে চিরসম্মত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবহমানকাল ধরে প্রেরণা যোগাবে।
বাংলাদেশের মানুষের যে স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষার মানসে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, প্রকৃতপক্ষে সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার পর বারবার সরকার বদল, হত্যা আর রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখল, দেশীয় ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী তৎপরতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, যুব সমাজের সৃষ্ট হতাশা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদির কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমাজে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। সত্যিকার অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন দেশ প্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে আন্তরিক পদক্ষেপ।
এ লক্ষ্যে দুর্নীতিমুক্ত কল্যাণকর শাসনব্যবস্থা যেমন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত গৌরবগাথা থেকে সঠিক ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। যে আদর্শ, উদ্দেশ্য ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামি মানুষ তাদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে, ইজ্জত দিয়েছে হাজার হাজার মা-বোন, আমাদের সমাজ এবং জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের সেই আদর্শ ও চেতনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে- এটিই আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব উজ্জ্বল চেতনাকে সমুন্নত রাখতে প্রতিক্রিয়াশীলদের সম্পর্কে আমাদের অধিকতার সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। তারা যাতে দেশ ও মানুষের কোন ক্ষতি করতে না পারে, সেজন্য প্রতিরোধ করে তুলতে হবে। তাদের সব ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে দিয়ে সব বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে। দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী কর্মকর্তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সব বিরোধের উর্ধ্বে থেকে দেশের অগ্রগতি ও জনগণের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচক যাতে ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্র্যমুক্ত সুশিক্ষিত উন্নত দেশ গড়ে উঠে সেজন্য একনিষ্ঠভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি আমরা যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের সবাইকে দেশ প্রেমে বলিয়ান হতে হবে।